Subscribe Us

পূরবী রাগ (রামমনি হালদার)

লেখাটি বার পড়া হয়েছে

পূরবী রাগ

              - রামমনি হালদার



মনখারাপ এর এক বিকেলবেলা,
সূর্য অস্তাচলে যাচ্ছে বলে,আমি তখন বিষণ্ণ;
রক্তিম আভা গায়ে মেখে,
তুমি এলে পূরবী রাগ হয়ে।
আঁধারের বিভীষিকা যখন
গ্রাস করতে এসেছিলো,
জীবন জটিলতার ফাঁক ফোকর দিয়ে
আমায় নিয়ে গেলে, এক শান্ত নদী তীরে।
ভেবেছিলাম,
আমার আঁধার বিভীষিকা দূর করতে
তুমি ছোট্ট একটা প্রদীপ জ্বালবে।
কিন্তু তুমি?
তুমি তার বদলে নিয়ে এলে আস্ত এক চাঁদ,
মুঠো ভরে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দিলে,নদীর জলে।
তীরে বসে তুমি আমি মিলে
গোড়ালি ভেজালাম ওই রূপলি জলে।
তোমার আঙুলের ফাঁকে
আমার আঙ্গুল গুলো জায়গা করে নিলো।
আমার বিভীষিকা হারিয়ে গেল
শত আলোক বর্ষ দূরে থাকা তারাদের ভিড়ে।
জীবন জটিলতার সমস্ত দুয়ার ভেঙে,
আমায় করে দিলে সহজ।

ব্যস্ত শহর তখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,
তুমি মাথা রাখলে আমার বুকে।
নদীর কুলু শব্দের তালে 
তোমার হৃদয় গান গেয়ে উঠলো।
কিন্তু, সে গানের শব্দ ছিলো দুর্বোধ্য,
বুঝিয়ে দিতে বললে, তুমি এড়িয়ে গেছো।
টেনে নিয়ে গেছো, 
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে,
যেখানে লুকিয়ে রেখেছিলে তোমার
সেই দুর্বোধ্য শব্দের অভিধান,
তবুও তা পড়তে দাও নি আমায়।
শত চেষ্টা করেও তার সন্ধান আমায় দাও নি।
হয়তো প্রয়োজন মনে করো নি।
কিছুক্ষন পরে ফিরিয়ে নিয়ে এলে, 
আবার সেই নদী তীরে,
গাইলে ঘুম পাড়ানি গান।
গায়ে জড়িয়ে দিলে জ্যোৎস্নার চাঁদর।

একসময় রাত ফুরিয়ে গেলে, 
রূপলি জল সোনালী হয়ে এলো।
ওপার থেকে ভেসে এলো এক সোনালী বজরা,
তাতে উঠে তুমি পারি দিলে ওপারের উদ্দেশ্যে।
আমি তখন ও ঘুমিয়ে।
তোমার নৌকো যখন মাঝ নদীতে,
তখন ঘুম ভাঙলো আমার।
তুমি চিৎকার করে ডেকে বলেছিলে,
"আঁধারের বিভীষিকা কেটে
সোনালী রোদ উঠেছে, 
এখনো কি ভয় করছে?"
জবাবে আমিও প্রশ্ন করলাম, 
" রাত তো আবার আসবে, 
আবার আসবে বিভীষিকা, 
তখন কি তুমি আসবে?"

ততক্ষনে তোমার নৌকো 
আমার শব্দের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
একবুক আশা নিয়ে রোজ বিকেলে,
আজও বসে থাকি সেই নদী তীরে,
হয়তো কোনো দিন, 
নদীর ওপার থেকে জবাব ভেসে আসবে,
সেই পরিচিত,
পূরবী রাগের সুরে..

✍️ রামমনি হালদার
হেমতাবাদ, উত্তর দিনাজপুর



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
খুব সুন্দর
নামহীন বলেছেন…
খুব সুন্দর